১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকার নিষিদ্ধ করল ছাত্রলীগ

Spread the love

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে বিভিন্ন সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আছে।
প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফার দাবি জানায়। এ সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেয় সংগঠনটি।

এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এই শহীদ মিনার থেকেই ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করানো এবং সংবিধান বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫ দফা ঘোষণা দেওয়া হলো।

পাঁচ দফা দাবি- ১. অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সেই জায়গায় ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। ২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করতে হবে। ৪. জুলাই বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। ৫. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী মুজিববাদীদের বলতে চাই, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা রাজপথে নেমে পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি। মৃত্যুর ভয় আমরা পাই না। মৃত্যুর পরোয়া আমরা করি না। শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেরাই বিচারের আওতায় চলে আসুন। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসব। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারিনি। বিগত ১৬ বছর বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদলের নেতাদের নির্যাতিত হতে দেখেছি। যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে আমরা ভালো পরিবেশ করে দিতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব শেষ হবে না।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে
আপডেটের সময় : ১২:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
১৩ টাইম ভিউ

সরকার নিষিদ্ধ করল ছাত্রলীগ

আপডেটের সময় : ১২:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
Spread the love

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে বিভিন্ন সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আছে।
প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

এমন অবস্থায় বর্তমান সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফার দাবি জানায়। এ সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেয় সংগঠনটি।

এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এই শহীদ মিনার থেকেই ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করানো এবং সংবিধান বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৫ দফা ঘোষণা দেওয়া হলো।

পাঁচ দফা দাবি- ১. অনতিবিলম্বে ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে। সেই জায়গায় ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। ২. এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদেরকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. এই সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করতে হবে। ৪. জুলাই বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। ৫. ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা যেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী মুজিববাদীদের বলতে চাই, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা রাজপথে নেমে পুলিশ লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি। মৃত্যুর ভয় আমরা পাই না। মৃত্যুর পরোয়া আমরা করি না। শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেরাই বিচারের আওতায় চলে আসুন। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসব। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারিনি। বিগত ১৬ বছর বিএনপি, জামায়াত, শিবির, ছাত্রদলের নেতাদের নির্যাতিত হতে দেখেছি। যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে আমরা ভালো পরিবেশ করে দিতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব শেষ হবে না।