০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদলাতে হবে

যেমন বদলে গেছে দেশ, বদলাতে হবে আমাদেরও

Spread the love

দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই না, তারা শ্রমজীবী মানুষদের পানি ও খাবারও বিতরণ করছেন।বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ নম্বর, সনি সিনেমা হলের সামনে, আগারগাঁও, ফার্মগেট এলাকায় এমন চিত্রই দেখা গেছে। এছাড়া গণভবনের সামনে, টিএসসি এলাকা, উত্তরা, খিলক্ষেত, বনানী, বিজয় সরনি, ধানমন্ডি এবং সায়েন্সল্যাব এলাকাতেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজে শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে বলে জানা যায়।

ঢাকার সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও সড়কে তাদের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো।আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা পেলেও এখনও রাজধানীর সড়কগুলোতে কাজ করতে হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের। তারাই প্রধানত সড়কে গাড়ি চলাচলসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছেন।
সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীরা পালা করে দায়িত্বপালন করছেন। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যদেরও দেখা গেছ।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। বিভিন্ন সড়কের মাঝে ও দেয়ালে লিখন মোছার কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। সাদা রঙ দিয়ে তারা সেসব লেখা মুছে ফেলছে। আবার নতুন করেও লিখছে দেশ সংস্কারের শ্লোগান। সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর এলাকায় কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করছেন। তারা যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন নিশ্চিত করছেন। একইসঙ্গে কেউ যেন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে না পারেন সেদিকেও রাখছেন কড়া নজর।ট্রাফিক কন্ট্রোল করা এক শিক্ষার্থী আশিক রহমান বলেন, দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করেছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। এখন আমাদের দেশকে আমরাই সাজাবো। আরেক শিক্ষার্থী ইকবাল বলেন, সড়কে এতদিন নানান অসংগতি থাকলেও এখন আর সেগুলো করতে দেয়া হবে না। কেউ উল্টা সাইড দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা চালাতে পারবে না। অবশ্যই মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরতে হবে। তরুণদের মধ্যে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারা যেকোনো ধরনের বৈষম্য এবং দুর্নীতি রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।সানিয়া আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল সারাদিন আমরা সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে আজ আনসাররা রয়েছেন। তারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। আমরা চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ। সবাই মিলেই সেটি গড়তে হবে। দেশ যেমন বদলে গেছে, আমাদেরও বদলাতে হবে।শিপলু শেখ নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘মিরপুরে ছাত্রদের এতো চমৎকার ট্রাফিক কন্ট্রোল দেখে আমি মুগ্ধ, বিমোহিত। তারা শুধু মূল সড়কই নয়, ছোট ছোট শাখা সড়ক, হাসপাতালের সামনে (যেগুলো জ্যাম তৈরি করতে পারে) অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া জেব্রা ক্রসিং মেইনটেইন, বড় সড়কে লেন মেইনটেইন ও উলটা সাইডে রিকশা চলাচল বন্ধ করেছে। কি দুর্দান্ত!’

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় যান চলাচল বেশি দেখা গেছে। বাসের সংখ্যা অন্য সময়ের মতো না হলেও গতকাল মঙ্গলবারের চেয়ে আজ বেশি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল বেড়েছে। অন্যান্য সড়কগুলোতেও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এর আগে, গতকাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আনসার ও ভিডিপি) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৫ আগস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে গেছেন। রাস্তায়ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে
আপডেটের সময় : ০৭:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
১৩ টাইম ভিউ

বদলাতে হবে

যেমন বদলে গেছে দেশ, বদলাতে হবে আমাদেরও

আপডেটের সময় : ০৭:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
Spread the love

দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও রাস্তার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই না, তারা শ্রমজীবী মানুষদের পানি ও খাবারও বিতরণ করছেন।বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ নম্বর, সনি সিনেমা হলের সামনে, আগারগাঁও, ফার্মগেট এলাকায় এমন চিত্রই দেখা গেছে। এছাড়া গণভবনের সামনে, টিএসসি এলাকা, উত্তরা, খিলক্ষেত, বনানী, বিজয় সরনি, ধানমন্ডি এবং সায়েন্সল্যাব এলাকাতেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজে শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে বলে জানা যায়।

ঢাকার সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও সড়কে তাদের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো।আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা পেলেও এখনও রাজধানীর সড়কগুলোতে কাজ করতে হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের। তারাই প্রধানত সড়কে গাড়ি চলাচলসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছেন।
সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীরা পালা করে দায়িত্বপালন করছেন। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যদেরও দেখা গেছ।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। বিভিন্ন সড়কের মাঝে ও দেয়ালে লিখন মোছার কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। সাদা রঙ দিয়ে তারা সেসব লেখা মুছে ফেলছে। আবার নতুন করেও লিখছে দেশ সংস্কারের শ্লোগান। সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর এলাকায় কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করছেন। তারা যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন নিশ্চিত করছেন। একইসঙ্গে কেউ যেন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে না পারেন সেদিকেও রাখছেন কড়া নজর।ট্রাফিক কন্ট্রোল করা এক শিক্ষার্থী আশিক রহমান বলেন, দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করেছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। এখন আমাদের দেশকে আমরাই সাজাবো। আরেক শিক্ষার্থী ইকবাল বলেন, সড়কে এতদিন নানান অসংগতি থাকলেও এখন আর সেগুলো করতে দেয়া হবে না। কেউ উল্টা সাইড দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা চালাতে পারবে না। অবশ্যই মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরতে হবে। তরুণদের মধ্যে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারা যেকোনো ধরনের বৈষম্য এবং দুর্নীতি রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।সানিয়া আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল সারাদিন আমরা সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে আজ আনসাররা রয়েছেন। তারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। আমরা চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ। সবাই মিলেই সেটি গড়তে হবে। দেশ যেমন বদলে গেছে, আমাদেরও বদলাতে হবে।শিপলু শেখ নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘মিরপুরে ছাত্রদের এতো চমৎকার ট্রাফিক কন্ট্রোল দেখে আমি মুগ্ধ, বিমোহিত। তারা শুধু মূল সড়কই নয়, ছোট ছোট শাখা সড়ক, হাসপাতালের সামনে (যেগুলো জ্যাম তৈরি করতে পারে) অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া জেব্রা ক্রসিং মেইনটেইন, বড় সড়কে লেন মেইনটেইন ও উলটা সাইডে রিকশা চলাচল বন্ধ করেছে। কি দুর্দান্ত!’

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় যান চলাচল বেশি দেখা গেছে। বাসের সংখ্যা অন্য সময়ের মতো না হলেও গতকাল মঙ্গলবারের চেয়ে আজ বেশি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল বেড়েছে। অন্যান্য সড়কগুলোতেও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এর আগে, গতকাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আনসার ও ভিডিপি) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৫ আগস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা চলে গেছেন। রাস্তায়ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।