জাতিসংঘের প্রাথমিক প্রতিবেদন
ছাত্র আন্দোলনে ৩২ শিশুসহ নিহত ৬৫০
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকার পতনের পর ৫ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে বিক্ষোভের নতুন ধাক্কায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিহতদের মধ্যে আছেন বিক্ষোভকারী, পথচারী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যও। এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর এবং বিশ্বাসযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সরকার শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের দমন করার চেষ্টা করেছে। জাতিসংঘ বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচারে বলপ্রয়োগে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সার্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক পক্ষগুলো, অন্তর্বর্তী সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এক বার্তায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, এমন ইঙ্গিত পেয়েছে জাতিসংঘ। তিনি উল্লেখ করেন, আরও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘(তাদের বিরুদ্ধে) বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যথেচ্ছ প্রেফতার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বড় আকারে বাধা দেওয়া ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেওয়ার মতো আরও কিছু অভিযোগও রয়েছে, যেগুলোর নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার দাবি করেন, ‘যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, বিশেষত, যারা অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি বলপ্রয়োগ করেছেন বা করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
ভলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশের পালাবদল মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘(মানবাধিকার) লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা এবং যারা এর শিকার তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই মূল কাজ। পরিস্থিতি উত্তরণে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’ এ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিস্তৃত পরিসরে তদন্তের কথা উল্লেখ করেন ভলকার তুর্ক।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবি তোলার কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনা স্বাধীনভাবে তদন্তের প্রস্তাব শেখ হাসিনার সরকারকে দিয়েছিল ইউএনএইচসিআর। ওই সময় তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও স্বাধীনভাবে তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশন (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউএনএইচসিআর। আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক তদন্তের জন্য একটি দল পাঠানোর আগে শুক্রবার প্রাথমিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করল ইউএনএইচসিআর।