০৫:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় নিরব, আনসার বিক্ষোভে সরব সজীব ওয়াজেদ জয়

Spread the love

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে ফেনী জেলা ও এর আশপাশের জনপদ। নোয়াখালি, লক্ষীপুর, কুমিল্লার অনেক জায়গায় থৈথৈ পানি। বন্যায় ভেসেছে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মানুষের অসহায়ত্ব, দুর্ভোগ আর আহাজারিতে সারা বাংলাদেশের বাতাস ভারি। ত্রান নিয়ে ছুটছে ছাত্র-জনতা। এত বড় মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে একেবারেই চুপ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ বিষয়ে ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে টু শব্দটি করেননি তিনি।
তবে রোববার সচিবালয় এলাকায় সাধারণ আনসার সদস্যদের রহস্যজনক বিক্ষোভ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় বেশ সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ সংক্রান্ত দুটি সংবাদ শেয়ার করে আনসারদের পক্ষে মায়াকান্না দেখিয়েছেন। রোববার ওই আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন, পরবর্তীতে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় ঠিক বিপরীত দাবি করেন। তার অভিযোগ-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত নিরীহ আনসার সদস্যদের উপর হামলা করেছে। তার ওই মন্তব্যের পেছনে আনসারদের এক ধরনের উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা আছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সরব ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফেসবুকে জয়ের উপস্থিতি আরও বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে নানা পোস্ট দিয়েছেন তিনি। কোনো কোনো পোস্টে আবার ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তবে এই করিতকর্মা জয় গত ১৫ আগস্টের পর হঠাৎ নিরব হয়ে যান। গত ১১ দিনে ফেসবুকে নতুন কোনো পোস্ট দেননি তিনি। যেন শীতনিদ্রায় গিয়েছিলেন তিনি।

এ সময়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলা তলিয়ে যায়। ত্রিপুরা ও মিজোরামে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ত্রিপুরার ডম্বুর জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় সুনামীর মতো অল্প সময়ে পানি এসে সব ভাসিয়ে দিয়ে যায়। এত দ্রুত পানির উচ্চতা বেড়েছে যে প্রাণভয়ে সবকিছু ফেলে রেখে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে নেমে আসে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার। টাওয়ারগুলো অচল হয়ে পড়ায় মোবাইল ফোন অকেজো হয়ে যায়। তাই পরিবারের অনেক সদস্য অন্যদের সদস্যদের খোঁজ পর্যন্ত নিতে পারছিলেন না; কে কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তা দু’তিনদিন সে খবরও জানতেন না তাদের স্বজনরা। সর্বনাশা বন্যা ভেসে গেছে খামারের মাছ, হাঁস-মুরগী, হাজার হাজার গবাদি পশু।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট আর ফেসবুকে নানা ছবি-ভিডিওতে বন্যার ভয়াবহতা দেখে মানুষ স্তব্ধ হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই সারাদেশে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ত্রান নিয়ে ছুটে গেছেন উপদ্রুত এলাকায়।
এমন ভয়াবহ বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করেননি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে গেছেন। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি তিনি কোনো সহমর্মিতা প্রকাশ করেননি। দলের নেতা-কর্মী বা দেশের মানুষকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথম একটি ভিডিও বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানান জয়। তাতে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে, শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে তা আমারও চিন্তার বিষয় না, আমাদের পরিবারের আর চিন্তার বিষয় না।’ দেশের মানুষের ভাল-মন্দ যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের চিন্তার বিষয় নয়, কখনোই ছিল না-বন্যা ইস্যুতে জয়ের ওই রহস্যময় নিরবতা সে ইঙ্গিতই করছে।
শেখ হাসিনার পতনের দিন থেকে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জয় ফেসবুকে ১৭টি পোস্ট দিয়েছেন, কথা বলেছেন ভারতীয়সহ একাধিক বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। তাতে কখনো তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার কখনো আর বাংলাদেশের রাজনীতি করবে না, কখনো বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তার মা দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেবেন, কখনো আবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আওয়ামীলীগের প্রয়োজনে দলের হাল ধরতে প্রস্তুত আছেন। এর মধ্যে একটি গণমাধ্যমের কাছে, তার মা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি, তাকে জোর করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে-এমন দাবি করে প্রবল বিতর্কের জন্ম দেন। তার ওই বক্তব্য শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তারপরও তিনি প্রায় নিয়মিত ফেসবুক পোস্ট ও বিদেশি গণমাধ্যমে কথা বলতে থাকেন।
আজকের আগে সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জয় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টে তিনি, জাতীয় শোক দিবসে যারা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন এবং শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভন্ন জেলা ও উপজেলায় জনসমাগম করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান। এরপর দিন তিনি হঠাৎ নিরব হয়ে যান। আর তার ১১ দিন পর আজ ওই নিরবতা ভেঙ্গেছেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে
আপডেটের সময় : ০৭:১০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
৬ টাইম ভিউ

বন্যায় নিরব, আনসার বিক্ষোভে সরব সজীব ওয়াজেদ জয়

আপডেটের সময় : ০৭:১০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
Spread the love

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে ফেনী জেলা ও এর আশপাশের জনপদ। নোয়াখালি, লক্ষীপুর, কুমিল্লার অনেক জায়গায় থৈথৈ পানি। বন্যায় ভেসেছে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মানুষের অসহায়ত্ব, দুর্ভোগ আর আহাজারিতে সারা বাংলাদেশের বাতাস ভারি। ত্রান নিয়ে ছুটছে ছাত্র-জনতা। এত বড় মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে একেবারেই চুপ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ বিষয়ে ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে টু শব্দটি করেননি তিনি।
তবে রোববার সচিবালয় এলাকায় সাধারণ আনসার সদস্যদের রহস্যজনক বিক্ষোভ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় বেশ সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ সংক্রান্ত দুটি সংবাদ শেয়ার করে আনসারদের পক্ষে মায়াকান্না দেখিয়েছেন। রোববার ওই আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন, পরবর্তীতে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় ঠিক বিপরীত দাবি করেন। তার অভিযোগ-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত নিরীহ আনসার সদস্যদের উপর হামলা করেছে। তার ওই মন্তব্যের পেছনে আনসারদের এক ধরনের উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা আছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সরব ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফেসবুকে জয়ের উপস্থিতি আরও বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে নানা পোস্ট দিয়েছেন তিনি। কোনো কোনো পোস্টে আবার ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তবে এই করিতকর্মা জয় গত ১৫ আগস্টের পর হঠাৎ নিরব হয়ে যান। গত ১১ দিনে ফেসবুকে নতুন কোনো পোস্ট দেননি তিনি। যেন শীতনিদ্রায় গিয়েছিলেন তিনি।

এ সময়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলা তলিয়ে যায়। ত্রিপুরা ও মিজোরামে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ত্রিপুরার ডম্বুর জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় সুনামীর মতো অল্প সময়ে পানি এসে সব ভাসিয়ে দিয়ে যায়। এত দ্রুত পানির উচ্চতা বেড়েছে যে প্রাণভয়ে সবকিছু ফেলে রেখে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে নেমে আসে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার। টাওয়ারগুলো অচল হয়ে পড়ায় মোবাইল ফোন অকেজো হয়ে যায়। তাই পরিবারের অনেক সদস্য অন্যদের সদস্যদের খোঁজ পর্যন্ত নিতে পারছিলেন না; কে কোথায় আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তা দু’তিনদিন সে খবরও জানতেন না তাদের স্বজনরা। সর্বনাশা বন্যা ভেসে গেছে খামারের মাছ, হাঁস-মুরগী, হাজার হাজার গবাদি পশু।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট আর ফেসবুকে নানা ছবি-ভিডিওতে বন্যার ভয়াবহতা দেখে মানুষ স্তব্ধ হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই সারাদেশে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ত্রান নিয়ে ছুটে গেছেন উপদ্রুত এলাকায়।
এমন ভয়াবহ বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করেননি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে গেছেন। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি তিনি কোনো সহমর্মিতা প্রকাশ করেননি। দলের নেতা-কর্মী বা দেশের মানুষকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথম একটি ভিডিও বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানান জয়। তাতে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে, শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে তা আমারও চিন্তার বিষয় না, আমাদের পরিবারের আর চিন্তার বিষয় না।’ দেশের মানুষের ভাল-মন্দ যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের চিন্তার বিষয় নয়, কখনোই ছিল না-বন্যা ইস্যুতে জয়ের ওই রহস্যময় নিরবতা সে ইঙ্গিতই করছে।
শেখ হাসিনার পতনের দিন থেকে গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জয় ফেসবুকে ১৭টি পোস্ট দিয়েছেন, কথা বলেছেন ভারতীয়সহ একাধিক বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। তাতে কখনো তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার কখনো আর বাংলাদেশের রাজনীতি করবে না, কখনো বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে তার মা দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেবেন, কখনো আবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আওয়ামীলীগের প্রয়োজনে দলের হাল ধরতে প্রস্তুত আছেন। এর মধ্যে একটি গণমাধ্যমের কাছে, তার মা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি, তাকে জোর করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে-এমন দাবি করে প্রবল বিতর্কের জন্ম দেন। তার ওই বক্তব্য শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তারপরও তিনি প্রায় নিয়মিত ফেসবুক পোস্ট ও বিদেশি গণমাধ্যমে কথা বলতে থাকেন।
আজকের আগে সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জয় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই পোস্টে তিনি, জাতীয় শোক দিবসে যারা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন এবং শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভন্ন জেলা ও উপজেলায় জনসমাগম করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান। এরপর দিন তিনি হঠাৎ নিরব হয়ে যান। আর তার ১১ দিন পর আজ ওই নিরবতা ভেঙ্গেছেন।