০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যা ইস্যুতে ভাইরাল শিশুর ছবি সম্পর্কে যা জানা গেল

Spread the love

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানির কারণে দেশের নয়টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বন্যাকবলিত মানুষের দুর্দশার চিত্র সামনে আসছে। এমনই একটি ছবি নেটিজেনদের মনে নাড়া দিয়েছে।

বুধবার (২১ আগস্ট) বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও ওই ছবি শেয়ার করে বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন।

ছবিটি নিয়ে মতামত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। তিনি তার ফেসবুকে ছবিটি সম্পর্কে যা জানিয়েছেন তা হুবহু নিচে দেওয়া হলো।

ছবিটি নিয়ে অনেকে জানতে চেয়েছেন- সত্যিকারের ছবি নাকি এআই জেনারেটেড।

প্রথমত, কোনো ইমেজ আএই জেনারেটেড কিনা তা এখনও কোন টুল ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলার সুযোগ নেই। টুলগুলোর দেয়া ফলাফল করোবোরেটিং এভিডেন্স হিসেবে রাখা যায় শুধু।

আমি ৩টি এআই ডিটেক্টর টুলে ছবিটি ট্রাই করে ৩ ধরনের ফলাফল পেয়েছি। একটিতে দেখিয়েছে ছবিটি ৯১ শতাংশ এআই জেনারেটেড। অন্যটিতে ৪০ শতাংশ এবং একটিতে দেখাচ্ছে ‘লাইকলি হিউম্যান মেইড’। ছবিটির অরিজিনাল ভার্সন পেলে হয়তো এই ভিন্নতর ফলাফল হতো না। কোনো এআই জেনেরেটেড ছবির অরিজিনাল ভার্সন ডিটেক্টর টুলে চেক করলে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কনক্লুসিভ ফলাফল পাওয়া যায়। (কোন ছবি একাধিক টুলের প্রতিটিতে ৭০ শতাংশের বেশি আইএই জেনারেটেড দেখালে আমরা সেটাকে কনক্লুসিভ ফলাফল হিসেবে গ্রহণ করে থাকি)।
কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে, বুঝাই যাচ্ছে শুধু টুল দিয়ে এআই জেনারেটেড কিনা তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ভিন্ন কিছু এঙ্গেল থেকে এটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

ছবিটি গতকাল থেকে অনলাইনে ছড়িয়েছে। নানানভাবে সার্চ করেও গতকালের আগে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরে কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটি পেশাদার কোন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার ছবি।

যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এটি ফেনী নোয়াখালী অঞ্চলের চলমান বন্যার ছবি, তাহলে এটি অনেক মূল্যবান একটি ছবি হওয়ার কথা। কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার এই ছবি তুললে অবশ্যই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এটি তিনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন সেটিতে প্রকাশ করবেন। তিনি ফ্রিলান্সার হলে অনেক দামে ছবিটি কোন সংবাদমাধ্যমের কাছে বিক্রি করবেন। অর্থাত, ছবিটি যেভাবে শুধু ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে তেমনটি হওয়া কথা না। প্রথমে এটি কোন সংবাদমাধ্যম বা এরকম প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট ও ক্যাপশন সহ প্রকাশিত হয়ে পরে ফেসবুকে আসার কথা। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা হয়নি।

যদি কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার এটি তার সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে থাকতেন তাহলে এমন একটি আবেদনময়ী ছবিতে অবশ্যই তার নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম ওয়াটারমার্ক করে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। ছবিটির কোন ভার্সনে এমন কিছু দেখা যায় না।

শিশুটি ক্যামেরার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে ফটোগ্রাফার খুবই কাছে ছিলেন এবং তিনি এই অবস্থায় একাধিক ছবি/ভিডিও তোলার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে এই একটি সূত্রহীন ছবি ছাড়া এই ঘটনার আর কোনো এঙ্গেলের ছবি বা ভিডিও নেই।

ছবিতে যেভাবে একটি উন্মুক্ত পানিভর্তি এলাকায় ২/৩ বছরের বাচ্চাকে অভিভাবক ছাড়া দেখা যাচ্ছে সেটি অসম্ভব না হলেও খুব স্বাভাবিক নয়। বাচ্চাটির ঠোঁটের গঠনও কিছুটা অস্বাভাবিক। একই সাথে তার চেহারায় আতঙ্কের কারণে চোখ ও কপালের একপাশে যে ভাঁজ (প্রকৃত ভাঁজ পড়বে কপালের ঠিক মাঝখান বরাবর) পড়েছে সেটিও স্বাভাবিক এক্সপ্রেশন মনে হচ্ছে না।

সবমিলিয়ে বলা যায়, ছবিটি সত্য ঘটনার না হয়ে তৈরি করা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে
আপডেটের সময় : ০৩:০৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
৫ টাইম ভিউ

বন্যা ইস্যুতে ভাইরাল শিশুর ছবি সম্পর্কে যা জানা গেল

আপডেটের সময় : ০৩:০৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
Spread the love

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানির কারণে দেশের নয়টি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বন্যাকবলিত মানুষের দুর্দশার চিত্র সামনে আসছে। এমনই একটি ছবি নেটিজেনদের মনে নাড়া দিয়েছে।

বুধবার (২১ আগস্ট) বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রকাশে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও ওই ছবি শেয়ার করে বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন।

ছবিটি নিয়ে মতামত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। তিনি তার ফেসবুকে ছবিটি সম্পর্কে যা জানিয়েছেন তা হুবহু নিচে দেওয়া হলো।

ছবিটি নিয়ে অনেকে জানতে চেয়েছেন- সত্যিকারের ছবি নাকি এআই জেনারেটেড।

প্রথমত, কোনো ইমেজ আএই জেনারেটেড কিনা তা এখনও কোন টুল ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলার সুযোগ নেই। টুলগুলোর দেয়া ফলাফল করোবোরেটিং এভিডেন্স হিসেবে রাখা যায় শুধু।

আমি ৩টি এআই ডিটেক্টর টুলে ছবিটি ট্রাই করে ৩ ধরনের ফলাফল পেয়েছি। একটিতে দেখিয়েছে ছবিটি ৯১ শতাংশ এআই জেনারেটেড। অন্যটিতে ৪০ শতাংশ এবং একটিতে দেখাচ্ছে ‘লাইকলি হিউম্যান মেইড’। ছবিটির অরিজিনাল ভার্সন পেলে হয়তো এই ভিন্নতর ফলাফল হতো না। কোনো এআই জেনেরেটেড ছবির অরিজিনাল ভার্সন ডিটেক্টর টুলে চেক করলে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কনক্লুসিভ ফলাফল পাওয়া যায়। (কোন ছবি একাধিক টুলের প্রতিটিতে ৭০ শতাংশের বেশি আইএই জেনারেটেড দেখালে আমরা সেটাকে কনক্লুসিভ ফলাফল হিসেবে গ্রহণ করে থাকি)।
কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে, বুঝাই যাচ্ছে শুধু টুল দিয়ে এআই জেনারেটেড কিনা তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ভিন্ন কিছু এঙ্গেল থেকে এটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

ছবিটি গতকাল থেকে অনলাইনে ছড়িয়েছে। নানানভাবে সার্চ করেও গতকালের আগে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরে কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটি পেশাদার কোন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার ছবি।

যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এটি ফেনী নোয়াখালী অঞ্চলের চলমান বন্যার ছবি, তাহলে এটি অনেক মূল্যবান একটি ছবি হওয়ার কথা। কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার এই ছবি তুললে অবশ্যই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এটি তিনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন সেটিতে প্রকাশ করবেন। তিনি ফ্রিলান্সার হলে অনেক দামে ছবিটি কোন সংবাদমাধ্যমের কাছে বিক্রি করবেন। অর্থাত, ছবিটি যেভাবে শুধু ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে তেমনটি হওয়া কথা না। প্রথমে এটি কোন সংবাদমাধ্যম বা এরকম প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট ও ক্যাপশন সহ প্রকাশিত হয়ে পরে ফেসবুকে আসার কথা। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা হয়নি।

যদি কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার এটি তার সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে থাকতেন তাহলে এমন একটি আবেদনময়ী ছবিতে অবশ্যই তার নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম ওয়াটারমার্ক করে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। ছবিটির কোন ভার্সনে এমন কিছু দেখা যায় না।

শিশুটি ক্যামেরার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে ফটোগ্রাফার খুবই কাছে ছিলেন এবং তিনি এই অবস্থায় একাধিক ছবি/ভিডিও তোলার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে এই একটি সূত্রহীন ছবি ছাড়া এই ঘটনার আর কোনো এঙ্গেলের ছবি বা ভিডিও নেই।

ছবিতে যেভাবে একটি উন্মুক্ত পানিভর্তি এলাকায় ২/৩ বছরের বাচ্চাকে অভিভাবক ছাড়া দেখা যাচ্ছে সেটি অসম্ভব না হলেও খুব স্বাভাবিক নয়। বাচ্চাটির ঠোঁটের গঠনও কিছুটা অস্বাভাবিক। একই সাথে তার চেহারায় আতঙ্কের কারণে চোখ ও কপালের একপাশে যে ভাঁজ (প্রকৃত ভাঁজ পড়বে কপালের ঠিক মাঝখান বরাবর) পড়েছে সেটিও স্বাভাবিক এক্সপ্রেশন মনে হচ্ছে না।

সবমিলিয়ে বলা যায়, ছবিটি সত্য ঘটনার না হয়ে তৈরি করা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।