০৬:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লুটের সুবিধার জন্য নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এস আলম পরিবার!

Spread the love


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম নিয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সাইফুল আলম।

দেশের ব্যাংকিং খাতের ত্রাস বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) কুকীর্তির নতুন নতুন তথ্য বের হয়ে আসছে। এবার ফাঁস হয়েছে তার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য। জানা গেছে, দুই বছর আগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। তবে নিজেদেরকে বিদেশী বিনিয়োগকারী দেখিয়ে বাগিয়ে নেন স্থায়ী বসবাসের (permanent residence) অনুমতি।
এস আলমের বিরুদ্ধে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ আছে। বেনামে ও কাগুজে কোম্পানি খুলে তিনি এই টাকা সরিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকেই তার পরিবার ৭৫ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে অবাধে টাকা লুট করে বিদেশে পাচারের সুবিধা এবং সহজে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখতে চক্রটি এই পথ বেছে নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ ও সম্মতিতে এমন কাণ্ড ঘটাতে পেরেছেন এস আলম ও তার পরিবার।

সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে নাগরিকত্ব নিয়ে এস আলম পরিবারের কীর্তি তুলে ধরা হয়েছে।
জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
তথ্য অনুসারে, এস আলস পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়।
তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।
এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আবেদনকারী স্থায়ী আবাসিক সুবিধা অধিকারের জন্য সনদ প্রদানের জন্য সরকারকে সন্তুষ্ট করেছেন। সেহেতু, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশ ১৪৯-এর অনুচ্ছেদ ৪এ-তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এবং ওই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত ১৯৭৮ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশের ৪বি অনুযায়ী আবেদনকারীকে স্থায়ী আবাসিক অধিকার প্রদান করা হলো এবং তিনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে, সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।’
এতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।’

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে
আপডেটের সময় : ০৭:০০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
৭ টাইম ভিউ

লুটের সুবিধার জন্য নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এস আলম পরিবার!

আপডেটের সময় : ০৭:০০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
Spread the love


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম নিয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সাইফুল আলম।

দেশের ব্যাংকিং খাতের ত্রাস বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) কুকীর্তির নতুন নতুন তথ্য বের হয়ে আসছে। এবার ফাঁস হয়েছে তার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য। জানা গেছে, দুই বছর আগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। তবে নিজেদেরকে বিদেশী বিনিয়োগকারী দেখিয়ে বাগিয়ে নেন স্থায়ী বসবাসের (permanent residence) অনুমতি।
এস আলমের বিরুদ্ধে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ আছে। বেনামে ও কাগুজে কোম্পানি খুলে তিনি এই টাকা সরিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকেই তার পরিবার ৭৫ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে অবাধে টাকা লুট করে বিদেশে পাচারের সুবিধা এবং সহজে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখতে চক্রটি এই পথ বেছে নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ ও সম্মতিতে এমন কাণ্ড ঘটাতে পেরেছেন এস আলম ও তার পরিবার।

সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে নাগরিকত্ব নিয়ে এস আলম পরিবারের কীর্তি তুলে ধরা হয়েছে।
জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
তথ্য অনুসারে, এস আলস পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়।
তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।
এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আবেদনকারী স্থায়ী আবাসিক সুবিধা অধিকারের জন্য সনদ প্রদানের জন্য সরকারকে সন্তুষ্ট করেছেন। সেহেতু, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশ ১৪৯-এর অনুচ্ছেদ ৪এ-তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এবং ওই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত ১৯৭৮ সালের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশের ৪বি অনুযায়ী আবেদনকারীকে স্থায়ী আবাসিক অধিকার প্রদান করা হলো এবং তিনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে, সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।’
এতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।’